বোহেমিয়ার কুৎসা-কাহিনি
[ এ স্ক্যানডাল ইন বোহেমিয়া ]
শার্লক হোমসের চোখে তিনিই নাকি একমাত্র 'মহিলা' পদবাচ্য স্ত্রীলোক। তার মানে এই নয় যে মেয়েটির প্রতি দুর্বলতা ছিল হোমসের। মন যার ঘড়ির কাটার মতো সুসংযত, কোনো ভাবাবেগ সেখানে ঠাঁই পায় না। হিসেবি মন আর তীক্ষ্ণদৃষ্টির একটা যন্ত্র বললেই চলে তাকে। ভাবালুতার কোনো দামই নেই তার কাছে বিচারশক্তি নাকি ঘুলিয়ে যায় এসব দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দিলে, তা সত্ত্বেও আইরিন অ্যাডলারকে শ্রেষ্ঠ মহিলার সিংহাসনে বসিয়েছিল শার্লক হোমস।
বিয়ের পর থেকেই হোমসের সঙ্গে যোগাযোগ কমে এসেছিল আমার। নিজের সংসার আর আলাদা ঘর নিয়েই তখন আমি মশগুল। হোমস সামাজিকতার ধার ধারে না। বেকার স্ট্রিটের ডেরায় রাশি রাশি বই; গোয়েন্দাগিরি আর কোকেনের নেশা নিয়ে সে রইল সম্পূর্ণ আলাদা জগতে। মাঝে মাঝে খবরের কাগজে চোখে পড়ত তার চমকপ্রদ কীর্তিকাহিনির সংবাদ।
নতুন করে ডাক্তারি শুরু করার পর একদিন রাত্রে রুগি দেখে বাড়ি ফিরছি (২০।৩। ১৮৮৮) বেকার স্ট্রিট দিয়ে, এমন সময়ে চোখে পড়ল ওপরের ঘরে দ্রুত পায়চারি করছে হোমস। পর্দার গায়ে দু-বার ছায়া পড়ল তার লম্বা রোগা শরীরের। দেখলাম মাথা বুকের ওপর ঝুঁকে রয়েছে, দু-
হাত পেছনে। অর্থাৎ কোকেনের নেশাকাটিয়ে উঠেছে হোমস, কাজের নেশায় বুঁদ হয়েছে। মাথায় সমস্যার ভূত চেপেছে বলেই এত ছটফট করছে ঘরময়।
উঠে এলাম ওপরকার ঘরে। হোমস আমাকে দেখল, খুশি হল, কিন্তু উচ্ছাস প্রকাশ করল না। চুরুটের বাক্স এগিয়ে দিয়ে সুরাপাত্রের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বসতে বলল চেয়ারে। তারপর তন্ময় চোখে চেয়ে রইল আমার দিকে।
'বিয়ে করে সুখী হয়েছ দেখছি। সাড়ে সাত পাউন্ড ওজন বেড়েছে।
'সাত পাউন্ড।'
"আবার ডাক্তারি শুরু করেছ?'
'তুমি জানলে কী করে?
'দেখে। আরও দেখছি, সম্প্রতি খুব ভিজেছ বৃষ্টিতে, আর একটা অকম্মার ধাড়ি ঝি জুটেছে বাড়িতে'।
'ভায়া, বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না কি? সেকাল হলে তোমায় নির্ঘাত জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হত। গত বৃহস্পতিবার গাঁয়ে গিয়েছিলাম হেঁটে, ফিরেছি অনেক কষ্টে। কিন্তু জামাকাপড় পাল্টানোর পরেও তুমি জানলে কী করে বল তো? যাচ্ছেতাই ঝি-টাকেও বিদেয় করেছে স্ত্রী। অথচ তুমি—'
হাসল হোমস। দু-হাত ঘষে বললে, “তোমার বাঁ-পায়ের জুতোয় পাশাপাশি দুটো আঁচড় পড়েছে- কানা ভুলতে গিয়েছিল এমন কেউ যে ডাহা আনাড়ি। অর্থাৎ, বাদলার দিনে রাস্তায় বেরিয়েছিলে এবং যে ঝি-টিকে
দিয়ে জুতো সাফ করিয়েছিলে, ঝাল ঝেড়েছে সে জুতোর ওপরেই। তোমার গায়ে আয়োডোফর্মের গন্ধ", ডান হাতের বুড়ো আঙুলে সিলভার নাইট্রেটের কালচে দাগ, আর স্টেথিস্কোপ রাখার জন্যে উঁচু টুপি দেখে অনায়াসেই বলা যায় রুগি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে ডাক্তার।'
হেসে ফেললাম। বললাম, 'এত সহজ করে বললে যে মনে হল আমারও বলা উচিত ছিল। চেয়ারে বসল হোমস। চুরুট ধরাল। বলল, 'তুমি দেখ ঠিকই, কিন্তু
খুঁটিয়ে দেখ না— তোমার সঙ্গে আমার তফাত সেইখানেই। যেমন ধর
নীচের হল ঘর থেকে এই ঘরে ওঠবার সিঁড়ি তুমি দেখেছ?'
“নিশ্চয়।"
'কতবার দেখেছ?'
'কয়েক-শো বার তো বটেই।'
‘ক-টা ধাপ আছে সিড়িতে?
"তা তো বলতে পারব না।'
“কিন্তু আমি পারব। কেননা, তুমি শুধু দেখেছ, ঠাহর করনি— আমি করেছি। সতেরোটা ধাপ আছে সিঁড়িতে। আমার ব্যাপার নিয়ে তুমি লেখালেখি শুরু করেছ বলেই তোমাকে একটা জিনিস দেখাচ্ছি, টেবিলের ওপর পড়ে থাকা একটা গোলাপি চিঠি আমার দিকে নিক্ষেপ করল হোমস, ‘জোরে পড়ো।
চিঠির কাগজ বেশ পুরু; কিন্তু তারিখ, সই, ঠিকানা— কিছুই নেই!
চিঠিটা এই : 'আজ রাত পৌনে আটটায় একটা অত্যন্ত গোলমেলে ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্যে মুখোশ পরে এক ভদ্রলোক আপনার সঙ্গে দেখা করবেন। ঘরে থাকবেন।
বললাম, রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। তোমার কী মনে হয় ?" "সূত্র হাতে না-আসা পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো মারাত্মক ভুল। চিঠি দেখে তোমার কী মনে হয়?” চিঠি যিনি লিখেছেন, তিনি বড়োলোক। কাগজটা রীতিমতো শক্ত,
মজবুত আর দামি।
"খাটি কথা। এ-কাগজ ইংল্যান্ডে পাওয়া যায় না। আলোর সামনে ধরো।'
ধরলাম। জলছাপটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম। g এর পাশে E, একটা
P, G-এর সঙ্গে t.
'কী বুঝলে?' হোমসের প্রশ্ন।
'কারিগরের নাম বা মনোগ্রাম। "
*না। g এর সঙ্গে t থাকার মানে গেসেল শাফট। জার্মান শব্দ। মানে, কোম্পানি। আমরা যেমন কোম্পানিকে কোং লিখি, ওরাও তেমনি গেসেল শাফটকে এইভাবে লেখে। P মানে পেপার। বাকি রইল E আর g এর মানেটা। কন্টিনেন্টাল গেজেটিয়ার" দেখলেই বোঝা যাবে।'
তাক থেকে বাদামি রঙের ইয়া মোটা একখানি বই নামিয়ে পাতা ওল্টাল হোমস।
ইগ্রো, ইগ্রোনিস, ইগ্রিয়া”। আর এই হল বোহেমিয়া”। ভাষা জার্মান। কাচ আর কাগজের কারখানার জন্যে বিখ্যাত। বল, কী বুঝলে?
সতর্কতার সঙ্গে আমি লেখাটা পরীক্ষা করলাম।" সিডনি প্যাগেট,
স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন, ১৯৯১
“কাগজটা তৈরি হয়েছে বোহেমিয়ায় ?
এবং পত্রলেখক একজন জার্মান। চিঠি লেখার কায়দা দেখেই বোঝা যায়। জার্মানরাই কথার শেষে ক্রিয়া বসায়। ভদ্রলোক কিন্তু এসে গেছেন।" কথা শেষ হতে-না-হতেই ঘোড়ার পায়ের টগবগ শব্দ, গাড়ির চাকার ঘরঘর আওয়াজ এবং দোরগোড়ার ঘণ্টাধ্বনি শোনা গেল।
শিস দিয়ে উঠল হোমস। বললে, "দু-ঘোড়ায় টানা গাড়ি মনে হচ্ছে। পরক্ষণেই উকি দিল জানলায়, ঠিক বলেছি। জোড়াঘোড়ায় টানা কহ্যাম ' গাড়ি। এক-একটা ঘোড়ার দামই কমসেকম দেড়শো গিনি। ওয়াটসন, এ- কেসে টাকা আছে হে।'
"আমি যাই।'
'মোটেই না। কেসটা ইন্টারেস্টিং, না-থাকলে আফশোস করতে
হবে।'
ধীর স্থির ভারিক্কি পদশব্দ সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসে স্তব্ধ হল দরজার সামনে। পরক্ষণেই টোকা পড়ল পাল্লায়— বেশ জোরে গাঁট ঠোকার আওয়াজ যেন কর্তাব্যক্তি কেউ।
'ভেতরে আসুন, বললে হোমস। ঘরে যিনি ঢুকলেন, মাথায় তিনি রীতিমতো ঢাঙা সাড়ে ছ-ফুটেরও বেশি। হারকিউলিসের মতো গড়নপেটন। পোশাক দারুণ দামি, কিন্তু ভীষণ জমকালো — ইংল্যান্ডের রুচিতে আটকায়। সারাগায়ে কুবেরের সম্পদ যেন ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মাথায় হ্যাট, আধখানা মুখ কালো মুখোশে ঢাকা। একটা হাত মুখোশ ছুঁয়ে রয়েছে— যেন ঢোকবার আগে এইমাত্র লাগালেন। মুখের নীচের দিকে প্রখর ব্যক্তিত্ব যেন ছিটকে বেরুচ্ছে। মোটা ঠোঁট আর লম্বা থুতনিতে গোঁয়ারভূমি, গাজোয়ারি আর মনের জোর বেশ স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে। রুক্ষ জার্মান উচ্চারণে বললেন- 'চিঠি পেয়েছেন?” বলে পর্যায়ক্রমে আমার আর হোমসের দিকে তাকালেন। যেন বুঝে উঠতে পারছেন না কার সঙ্গে কথা বলবেন।
'বসুন, বললে হোমস। ইনি আমার বন্ধু এবং সহযোগী ডক্টর ওয়াটসন। কার সঙ্গে কথা বলছি জানতে পারি?
"আমার নাম কাউন্ট ফন ক্র্যাম- বোহেমিয়ার খানদানি আদমি
আমি। একে বিশ্বাস করা চলে তো?' উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছি, টেনে বসিয়ে দিল হোমস।
বলল, “হয় দুজনে শুনব, নয় কেউ শুনব না। এর সামনেই বলুন। কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে কাউন্ট বললেন, 'তাহলে কথা দিন অন্তত দু-বছর এ- ব্যাপার প্রকাশ করবেন না করলে ইউরোপের ইতিহাস অন্যরকম দাঁড়াতে পারে।
'কথা দিলাম', বললাম আমি আর হোমস।
"আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তিনি চান না আমার পরিচয় ফাঁস হয়ে যাক। মুখোশ লাগিয়েছি সেই কারণে। আমার আসল নামও আপনাকে বলিনি।'
"জানি, কাঠখোট্টা গলায় বললে হোমস। 'বোহেমিয়ার আর্মস্টাইন রাজবংশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য এত সাবধান হতে হচ্ছে জানবেন? সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে হোমস বললে, “তাও জানি। অবাক হলেন রহস্যময় মক্কেল। হোমসের নামডাক যে অকারণে হয়নি, তা যেন বুঝতে পারলেন ।
চোখ খুলল হোমস। বললে, “মহারাজ যদি মন খোলসা করে সব বলেন তাহলে আমার দিক দিয়ে পরামর্শ দিতে সুবিধে হয়। তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন বিরাটদেহী আগন্তুক। দুমদাম করে ঘরময় কিছুক্ষণ চরকিপাক দিয়ে একটানে মুখোশ খুলে নিয়ে নিক্ষেপ
করলেন মেঝেতে।
'হ্যাঁ, হ্যাঁ আমিই রাজা। অত লুকোছাপা কীসের?'
'আমিও তাই বলি। আপনি মুখ খোলার আগেই বুঝেছিলাম আজ আমার ঘরে পায়ের ধুলো দিয়েছেন স্বয়ং ডিউক।' "ব্যাপারটা এতই গোপনীয় যে কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনি—
প্রাহা থেকেই ছদ্মবেশ ধরে আসছি।'
"শুরু করুন, ফের চোখ বন্ধ করে হোমস।
বছর পাঁচেক আগে ওয়ারশ নগরে নামকরা অভিনেত্রী আইরিন
অ্যাডলারের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। নামটা শুনেছেন নিশ্চয়?”
নামি ব্যক্তিদের যাবতীয় বৃত্তান্ত লিখে রাখত হোমস। দরকারমতো তা কাজে লাগত। আইরিন অ্যাডলারের নাম পেলাম একজন ইহুদি
প্রফেসর আর মিলিটারি অফিসারের নামের মধ্যে।
দাও। হুঁ! নিউজার্সিতে জন্ম ১৮৫৮ সালে। ইম্পিরিয়াল ওয়ারশ রঙ্গমঞ্চের মূল গায়িকা। হুঁ! থিয়েটার ছেড়ে দিয়ে লন্ডনে আছেন। বুঝেছি। একে যেসব চিঠি লিখেছেন, এখন তা ফেরত চাইছেন- এই তো?'
"তাই বলতে পারেন। লুকিয়ে বিয়ে করেছিলেন?
'মোটেই না।'
দলিল-টলিল বা প্রশংসাপত্র জাতীয় কিছু আছে কি?”
'একদম না?
*তাহলে সে-চিঠি যে আসল, তা প্রমাণ করা যাবে কী করে?
"আমার হাতের লেখা দেখে।'
“হাতের লেখা জাল করা যায়।' “প্যাডের কাগজ আমার।'
“তাও চুরি করা যায়।’
'সিলমোহরটাও যে আমার।'
"তাও নকল করা যায়।'
"আমার ফটো?"
'সে আর এমন কী কিনতে পাওয়া যায়।
“কিন্তু দুজনে একসঙ্গে আছি যে ফটোতে।
'সর্বনাশ! খুব কাঁচা কাজ করেছেন। তখন কি আর কাণ্ডজ্ঞান ছিল আমার? বয়স কম। যুবরাজ ছিলাম।
এখনই তো মোটে তিরিশ বছর বয়স আমার।' ফটোটা ওঁর কাছ থেকে সরাতে হবে।'
'সে চেষ্টাও হয়েছে। পারিনি। 'তাহলে কিনে নিন।
'বেচবে না।'
'চুরি করান।
'পাঁচবার চেষ্টা করেছি। দু-বার চোর দিয়ে, একবার দেশ বেড়ানোর সময়ে মালপত্র সরিয়ে, আর দু-বার পথে ঘাপটি মেরে থেকে। একবারও
পারিনি।'
ছবি নিয়ে কী করতে চান উনি?'
'স্ক্যান্ডিনেভিয়ার রাজকন্যের সঙ্গে শিগগিরই বিয়ে হবে আমার। মেয়েটি যদি জানতে পারে আমার চরিত্র ভালো নয়, বিয়ে ভেঙে যেতে পারে। আইরিন অ্যাডলার ছবিখানা সেইখানেই পাঠাবে। 'পাঠিয়ে দেননি তো?”
না। বিয়ের কথা যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে, সেইদিন পাঠাবে। অর্থাৎ সামনের সোমবার।
হাই তুলল হোমস- তিনটে দিন পাচ্ছি হাতে। আপনি লন্ডনেই
আছেন তো?
'হ্যাঁ। ল্যাংহ্যামে পাবেন আমাকে।'
“খবর সেইখানেই দেব। দেনাপাওনার ব্যাপারটা কী হবে?" 'যা বলবেন তাই হবে। রাজ্যের খানিকটা দিয়ে দিতে পারি ফটোর
দাম হিসেবে।'
'হাতখরচ?'
একটা চামড়ার ব্যাগ বার করে টেবিলে রাখলেন গ্র্যান্ড-ডিউক
'এর মধ্যে তিন-শো মোহর আর সাত-শো পাউন্ডের নোট আছে। রসিদ লিখে দিল হোমস – আইরিন অ্যাডলারের ঠিকানাটা কী ? 'ব্রায়োনি লিজ, সাপেন্টাইন অ্যাভিনু, সেন্ট জনস উড।' ফটোটা ক্যাবিনেট সাইজের?'
'হ্যাঁ।'
“গুড নাইট। শিগগিরই খবর পাবেন।
গাড়ির আওয়াজ দূরে মিলিয়ে গেল। হোমস বলল, “কাল বিকেল
তিনটে নাগাদ চলে এস, এই নিয়ে কথা বলা যাবে'খন।' পরদিন ঠিক তিনটেয় গেলাম। হোমস সকাল আটটায় বেরিয়েছে,
তখনও ফেরেনি। আগুনের চুল্লির ধারে বসে রইলাম ফেরার পথ চেয়ে।
ঘড়িতে ঢং ঢং করে চারটে বাজতেই দরজা খুলে ঘরে ঢুকল একজন কদাকার সহিস। পোশাক নোংরা, মুখে দাঁড়িগোফ, চোখ রাঙা, ভাবভঙ্গি, মাতালের মতন। তিন-তিনবার আপাদমস্তক চোখ বুলোনোর পর চিনলাম বহুরূপী হোমসকে। শোবার ঘর থেকে পাঁচ মিনিট পরেই বেরিয়ে এল টুইড-সুট পরা ভদ্রলোকের চেহারায়। আগুনের সামনে পা ছড়িয়ে বসে পেটফাটা হাসি হাসল বেশ কিছুক্ষণ ধরে।
ব্যাপারটা কী ? শুধোই আমি। 'দারুণ মজা হয়েছে আজ সকালে।' 'ঠিক। সহিসের ছদ্মবেশে বেরিয়েছি সকাল আটটায়। গাড়োয়ান আর সহিসে খুব মাখামাখি সম্পর্ক থাকে— খবর পেতে অনেক সুবিধে হয়। ব্রায়োনি লক্ষ বাড়িটা দোতলা, রাস্তার ওপরেই, পেছনে বাগান, ডান দিকে সাজানো বসবার ঘর, বড়ো বড়ো জানলা। বাগানের পাঁচিল বরাবর একটা নোংরা গলি ঢুকেছে ভেতরে। সহিসরা ঘোড়া ডলাইমালাই করছে সেখানে। আমিও হাত লাগালাম। বিনিময়ে পেলাম দুটা েপেনি, আধ বোতল মদ, তামাক আর আইরিন অ্যাডলার সম্পর্কে অনেক খবর। নির্ঝঞ্ঝাট মহিলা। ভোরে বেড়াতে যাওয়া আর কনসার্টে গান গাইতে যাওয়া ছাড়া রাস্তায় বেরোন না। সাতটায় ফিরে ডিনার খান। পুরুষ বন্ধু শুধু একজনই। সুপুরুষ, প্রাণশক্তিতে ভরপুর, গায়ের রং গাঢ়, রোজ আসেন। পেশায় উকিল, নাম গডফ্রে নর্টন। খটকা লাগল। আইরিন অ্যাডলারের সঙ্গে তার সম্পর্কটা স্রেফ উকিলের সঙ্গে মক্কেলের সম্পর্ক, না ভালোবাসাবাসির ব্যাপারও
আছে? প্রথমটা যদি ঠিক হয়, তাহলে ফটো তার হেপাজতেই আছে। অর্থাৎ তদন্তের ক্ষেত্র আরও বাড়ল।
"ভাবছি কী করব, এমন সময়ে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল বাড়ির সামনে। লাফিয়ে নামলেন এক ভদ্রলোক। চেহারা দেখেই বুঝলাম ইনিই গডফ্রে নর্টন। ব্যস্তসমস্তভাবে গাড়োয়ানকে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে ঝি-এর পাশ দিয়ে বো করে ঢুকে গেলেন ভেতরে যেন হরদম যাতায়াত আছে বাড়িতে।
'ভেতরে রইলেন আধঘণ্টা। জানালা দিয়ে দেখলাম হন হন করে পায়চারি করছেন আর হাত পা নেড়ে উত্তেজিতভাবে কথা বলছেন। আইরিন অ্যাডলারকে খুব একটা দেখা গেল না। তারপর বেরিয়ে এলেন.....